আনোয়ার সাঈদ তিতু, কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি:-
কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ী উপজেলায় ২২০ ফিট লম্বা বাঁশের সাঁকোটি ভেঙে যাওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন বারোমাসিয়া নদীর দুপাড়ের হাজারও মানুষ। সাঁকোটি এক মাস আগে ভেঙে যাওয়ায় চরম ভোগান্তি নিয়ে নদী সাঁতরে পারাপার করছেন দুপাড়ের হাজারও মানুষ। সব থেকে চরম ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হচ্ছে নারী, শিশু বৃদ্ধ, ও শিক্ষার্থীরা। এই চরম দুর্ভোগ থেকে রক্ষা পেতে জরুরি ভিত্তিতে ভাঙা বাঁশের সাকোটি দ্রুত সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন দুপাড়ের বাসিন্দারা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের কিশামত শিমুলবাড়ী এলাকায় নবিউলের/আমিন মেম্বারের ঘাট নামে পরিচিত বারোমাসিয়া (বাণিদাহ) নদীতে ২২০ ফুট লম্বা বাঁশের সাঁকোটির দক্ষিণ দিকে প্রায় ৫০ থেকে ৬০ ফিট দৈর্ঘ্যের বাঁশের সাকোটি ভেঙে যাওয়ায় দুপাড়ের বাসিন্দারা কেউ এক বুক নদীর পানি পাড়ি দিয়ে হেঁটে পাড় হচ্ছেন। অনেককে নদী সাঁতরিয়েও পারাপার করতেও দেখা গেছে। দুইপাড়ের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, স্বাধীনতার পর থেকে বারোমাসিয়া নদীটি পাড়ি দিয়েছেন ছোট ছোট ডিঙি ও মাঝারি নৌকা দিয়ে। তখন থেকে দীর্ঘ সময় পারাপার করতেন দুই পাড়ের বাসিন্দারা। সেই সময় থেকে করিমের, নবিউলের সর্বশেষ আমিন মেম্বারের ঘাট ইজারাদারের মাধ্যমে পারাপার হতো মানুষজন। এরপর বারোমাসিয়া নদীর আঁকার ছোট হওয়ায় দুপাড়ের বাসিন্দাদের উদ্যোগে বাঁশের সাকো তৈরি করা হয়। সেই সময় থেকে ২০২৫ সালের জুন মাস পর্যন্ত প্রায় টানা ১০ বছর ধরে বাঁশের সাকো দিয়ে দুই পাড়ের হাজারও মানুষ পারাপার করে আসছেন।
প্রতি বছর বর্ষার আগেই স্থানীয়রা যাতে বর্ষা মৌসুমে ভালো ভাবে নদী পারাপার করতে পারে সে জন্য বাঁশের সাকোটি মেরামত করে। তবে এবছরও মেরামতের প্রস্তুতি নেন স্থানীয়রা। এরই মধ্যে ২৫ থেকে ২৬ দিন আগে সাঁকোর নিচে কচুরিপানা জমে অবস্থায় হঠাৎ নদীর তীব্র স্রোতে নড়বড়ে বাঁশের সাকোটি ভেঙে যায়। সাঁকো ভেঙে যাওয়ায় দুপাড়ের বাসিন্দারা নদী সাঁতরিয়ে পারাপার করছে। আবার অনেকেই এক বুক নদীর পানি মাড়ি দিয়ে হেঁটে পারাপার করছেন। ফলে গত এক মাস থেকে নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের কিশামত শিমুলবাড়ী, চরগোরকমন্ডল, ঝাঁউকুটি, পশ্চিম ফুলমতি, নাওডাঙ্গা ও শিমুলবাড়ী ইউনিয়নের হকবাজার এবং পার্শ্ববর্তী লালমনিরহাট সদর উপজেলার কুলাহাট ইউনিয়নের চরখারুয়া এবং খারুয়াসহ ৮ গ্রামের হাজারও মানুষ এখন নদী পারাপারে চরম বিপাকে পড়েছেন। কিশামত শিমুলবাড়ী এলাকার আহের আলী ও ঝাউকুটি এলাকার নুর ইসলাম জানান, এখানে বলার ভাষা নেই। সাঁকোটি ভেঙে যাওয়ার প্রায় এক মাস হয়ে গেল। এখন পর্যন্ত ভাঙা সাঁকোটি মেরামতের জন্য কেউ উদ্যোগ নেয়নি। আমরা প্রতিদিনেই বাইসাইকেল কাঁধে নিয়ে বারোমাসিয়া নদীর পারাপার হচ্ছি। আমাদের এই দু:খ কষ্ট কেউ দেখছেন না বলো ক্ষোভ জানিয়েছেন।
স্থানীয় মর্জিনা বেগম ও জাহানারা বেগম জানান, কি কই বাহে, তোমরাতো দেখতেছেন। আমরা বারোমাসিয়া নদীর এক বুক পানি মাড়ি দিয়ে জ্বালানির কাজে ব্যবহার করা ভুট্টার শুকানো খড়ি (লাকড়ি) মাথায় নিয়ে পারাপার করছি। খালি ছবি তোলেন বাহে। আজ এক মাস ধরে এতো কষ্ট করে নদী পারাপার করছি, কেউয়ে খোঁজ নিতে আসেননি। এখন স্কুল বন্ধ। কয়েকদিন পর স্কুল খুললেই আমাদের ছেলে মেয়েদের অনেক কষ্ট হবে। আমরা স্কুল খোলার আগেই সাঁকোটি মেরামত করার দাবি জানাচ্ছি। লালমনিরহাটের উপজেলার চর খারুয়া এলাকার বাসিন্দা তসলিম উদ্দিন জানান, আমার এলাকার শত শত মানুষজন এই পথেই নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের বালারহাট বাজারে নিয়মিত আসা যাওয়া করি। এছাড়াও আমাদের এলাকার ছেলে মেয়েরা নাওডাঙ্গা স্কুল এন্ড ও বালারহাট আদর্শ স্কুলে পড়েন। সাঁকোটি ভেঙে যাওয়ায় আমরা চরম দুর্ভোগ নিয়ে আসা যাওয়া করছি। চর খারুয়া এলাকার শিক্ষার্থী জুয়েল রানা, খারুয়া এলাকার মাসুদ রানা ও ঝাউকুটি এলাকার শিক্ষার্থী হাসানুর রহমান বলেন, এখন স্কুল কলেজ বন্ধ থাকায় মাঝে মধ্যে সাঁতরে নদী পার হচ্ছে। কয়েকদিন পর স্কুল কলেজ খুলবে তখনতো বই, খাতাপত্রসহ নদী সাঁতরে কিভাবে যাবেন এই দুশ্চিন্তায় পড়েছেন শিক্ষার্থীরা। তারা দ্রুত সাঁকোটি মেরামতের দাবি জানিয়েছেন।
নাওডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. হাছেন আলী জানান, আমাদের ৬ নং ওয়ার্ডে বারোমাসিয়া (বাণিদাহ) নদীতে একটি সাঁকো আছে। সেই সাঁকো দিয়ে দুপাড়ের হাজার হাজার মানুষ পারাপার করতেন। কিন্তু গত এক মাস আগে তীব্র স্রোতে সাঁকোটি ভেঙে যাওয়ায় পারাপারের চরম দুর্ভোগের সৃষ্টি হয়। স্কুলের ছেলে মেয়েরা পাড় হতে পারছেন না। অনেকেই এক বুক পানিতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নদী পাড় হচ্ছেন। সবার যৌথ উদ্যোগে ভেঙে যাওয়া সাঁকোটি দ্রুত পূর্ণ:নির্মাণ করা খুবই জরুরি। সাঁকোটি সাঁকো নির্মাণ করা হলে হাজার হাজার মানুষের চরম দুর্ভোগ কেটে যাবে। সেই সাঁকোটি পূর্ণ: নির্মাণের জন্য এলাকাবাসী এগিয়ে আসার আহবান জানান। সেই সাথে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সিরাজউদ্দৌলা জানান, সরেজমিন পরিদর্শন করে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে। এরপর বরাদ্দ আসলে সেখানে একটি বাঁশের সাঁকো পূর্ণ:নির্মাণের জন্য বরাদ্দ দেয়া হবে।