আনোয়ার সাঈদ তিতু, কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি:-
কুড়িগ্রামে অতি বৃষ্টি এবং উজান থেকে নেমে আসা ঢলের কারণে প্রায় ৩ শতাধিক হেক্টর কৃষি জমি আক্রান্ত হয়েছে। এতে সম্পূর্ণ ফসলের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ১৩৪ হেক্টর জমিতে। এর ফলে ১ হাজার ৯৫৭জন কৃষকের ৩ কোটি ২৬লক্ষ ১৬ হাজার ৯শ’ টাকার ফসলের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জেলা কৃষি বিভাগ সূত্র জানিয়েছে। এর মধ্যে সিংহ ভাগ ক্ষতি হয়েছে জেলার রাজারহাট উপজেলায়। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্য মতে, চলতি সপ্তাহে তিস্তা নদীর পানি সতর্কসীমার কাছাকাছি প্রবাহিত হচ্ছে।
কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, এতে নদ-নদী অববাহিকায় অবস্থিত নীচু চরের জমিতে লাগানো বাদামের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে। এছাড়াও মরিচ, তিল ও বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে। কুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাট উপজেলার তিস্তা নদী অববাহিকায় অবস্থিত ডাংরারহাট এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত বাদাম চাষী হাবিবুর রহমান জানান, ‘গত ৩দিনের মধ্যে পানি বাড়ার ফলে বাদাম ক্ষেতগুলো তলিয়ে যায়। বন্যার পানির সাথে পলিমাটি আসায় বাদামগুলো মাটির নীচে চাপা পরে গেছে। এখণ ঠিকভাবে তোলা যাচ্ছে না। অধিকাংশ ক্ষেত বিনষ্ট হয়ে গেছে। একই এলাকার বাদাম চাষী মুস্তফা জানান, ‘ভাই সব শেষে। কাদামাটি পরে বাদাম তলিয়ে গেছে। একজনের জায়গায় ৫ জন লেবার নিয়েও বাদাম তোলা যাচ্ছে না। এই হলো আমাদের পরিস্থিতি। এখন কি করে বাঁচবো। বাঁচার আর পথ নেই। শেষ চিকিৎসা ছিল এই বাদাম চারটা দিয়া সংসার চালাবো সেটাও আর হলো না। এখন ঋণের দায়ে কী হবে তা আর ভেবে পাচ্ছি না।
কৃষক আজিজুল জানান, ’লাখ লাখ টাকা খরচ করে ফসল চাষ করে এখন চরম লোকসানে পরে গেছি। পাওনাদারের চাপে বাড়িতে থাকতে পারবো না। সরকারিভাবে কোন সহযোগিতা করলে উপকার হতো। কুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাট উপজেলার বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের তিস্তাপাড়ের বিদ্যানন্দের চরের কৃষক সাইফুল ইসলাম বলেন, আমার ২একর জমির বাদাম বন্যার পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে। কুড়িগ্রাম জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, বৃষ্টি ও বন্যার কারণে জেলায় ১৩৪ হেক্টর জমির ফসল সম্পূর্ণ নষ্ট হয়েছে। এরমধ্যে বাদাম ৫৪ হেক্টর, বোরোধান ৪৪ হেক্টর, সবজি ২৬ হেক্টর, তিল ৯ হেক্টর ও মরিচ ১ হেক্টর।
এ ব্যাপারে কুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাট উপজেলা কৃষি অফিসার শামসুন্নাহার সাথী জানান, রাজারহাটে তিস্তা নদীর অববাহিকায় অবস্থিত অপেক্ষাকৃত নীচু এলাকায় রোপনকৃত বাদাম ও মরিচের আংশিক কিছু ক্ষতি হয়েছে। এতে নিমজ্জিত হয়েছে ৪২ হেক্টর জমি এবং আংশিক ক্ষতি হয়েছে ১৬ হেক্টর জমিতে। পানি নেমে গেলে আমরা প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতি পরিমাপ করে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠাবো। তারা যে পরামর্শ প্রদান করবেন সেভাবে কাজ করবো।