সাগর আহমেদ জজ,নেত্রকোনা প্রতিনিধি
নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার আগিয়া ইউনিয়নের সাত্যাটি গ্রামে পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের চরম অবহেলায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে একটি গরু ও একটি কুকুর মারা গেছে এবং আরও একটি গরু আহত হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার (২৯ মে) দিবাগত রাতের ঝড়ের পর ছিঁড়ে পড়া বৈদ্যুতিক তার সময়মতো মেরামত না করায় শনিবার সকাল ৭টার দিকে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সাত্যাটি গ্রামের আব্দুর রহিম (৫৫) এর বাড়ির পাশে বৃহস্পতিবার রাতে ঝড়ের সময় একটি বৈদ্যুতিক তার ছিঁড়ে পড়ে। বিষয়টি শুক্রবার সকালে স্থানীয় বাসিন্দা হারুন অর রশীদ পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের অভিযোগ নাম্বারে জানালে ঐদিন বিকেল ৪ টার দিকে বিদ্যুৎ অফিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে এসে মেরামতের চেষ্টা করেন। তবে, তারা ৫-৬টি বাড়ির লাইন কেটে চলে যান এবং ঠিকভাবে লাইন বিচ্ছিন্ন না করায় সন্ধ্যায় ফের লাইনে বিদ্যুৎ চলে আসে। এতে কিছু ঘরে আগুন ধরে যায়। আব্দুর রহিমের ভাতিজা ইয়াছিন তখন পুনরায় বিদ্যুৎ অফিসে কল করে বিদ্যুৎ বন্ধের অনুরোধ জানান। কিন্তু বিদ্যুৎ অফিসের পক্ষ থেকে জানানো হয় ৫-৬টি বাড়ির জন্য তারা পুরো লাইন বন্ধ করতে পারবেন না। ইয়াছিন সম্ভাব্য প্রাণহানির কথা বললেও তারা বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয়নি এবং ক্ষতি হলে ক্ষতিপূরণ দিবে বলেই দায় এড়িয়ে যায় এবং অসৌজন্যমূলক আচরণের অভিযোগ করেন বলে জানান। শুক্রবার ইয়াছিন দেখতে পান তার চাচা আব্দুর রহিমের একটি গরু ক্ষেতে ঘাস খাওয়ার সময় হঠাৎ লাফিয়ে পড়ে এবং কিছুক্ষণ পর নিথর হয়ে যায়। গরুটি বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যায়। গরুটির অস্বাভাবিক আচরণ দেখে রহিমের পালিত একটি কুকুর সেখানে ছুটে গেলে সেও বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে প্রাণ হারায়। একই সময় গ্রামের আরেক বাসিন্দা আলাল মিয়ার একটি গরুও বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে আহত হয়।
গ্রামবাসীরা জানান, বর্ষার কারণে ক্ষেতে পানি জমে ছিল, যার মাধ্যমে ছিঁড়ে পড়া তার থেকে বিদ্যুৎ পুরো ক্ষেতে ছড়িয়ে পড়ে। এতে প্রাণীর পাশাপাশি মানুষজনও ঝুঁকির মধ্যে পড়ে। নিহত গরুর মালিক আব্দুর রহিম জানান, বিদুৎ অফিসের বারবার একাধিক ব্যক্তি ফোন দেওয়ার পর তারা লাইন মেরামত করে বরং গ্রামের মানুষদের জীবন ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিয়েছিলো। আমার গরু ও সন্তানের মতো পালিত কুকুরটি মারা গেছে এবং আমাদের সবার জীবন ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছিলো। এ ব্যাপারে যাদের কর্তব্য অবহেলায় এমনটি হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। এসময় গরুর মালিক আব্দুর রহিম তার ক্ষতিপূরণ দাবি করেন। স্থানীয় বাসিন্দা ফাতেমা আক্তার বলেন, ‘আমার ছেলেসহ দুটি শিশু শুক্রবার বিকেলে ক্ষেতে গিয়েছিল। ভাগ্য ভালো, তারা ছোঁয়া দেয়নি। তা না হলে বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারতো। স্থানীয়রা পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের দায়িত্বহীনতা এবং সময়মতো ব্যবস্থা না নেওয়ায় চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। গরুর এবং কুকুরের মৃত্যুর না হয়ে মানুষ ও মারা যেতো পারতো। তারা এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে যাদের অবহেলায় এমনটি হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহন ও ক্ষতিপূরণ দাবি করেছেন।
এ ঘটনায় পর পূর্বধলা পল্লী বিদুৎ অফিসের এজিএম দুলাল হোসেন ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে বিদ্যুৎ অফিসের অবহেলার দ্বায় স্বীকার করে জানান, একযোগে পূর্বধলা জোনাল অফিসের কর্মচারীর রদবদলের কারনে লাইনে মেরামতের কিছুটা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। নেত্রকোনা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) আকরাম হোসেন জানান, লাইনম্যানদের আন্দোলনের কারণে অধিকাংশ কর্মী ঢাকায় অবস্থান করছেন। ফলে লাইনম্যান সংকটের কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। ঘটনার তদন্তে পূর্বধলা জোনাল অফিসের ডিজিএম ও এজিএমকে দায়িত্ব দিয়ে একটি কমিটি গঠন করার দাযিত্ব দেওয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত গরুর মালিককে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, “তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর দায় প্রমাণিত হলে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে এবং দায়িত্বে অবহেলা থাকলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে একাধিক লাইনম্যান জানান, সামান্য ঝড়-বৃষ্টিতেই বিদ্যুৎ লাইন ছিঁড়ে পড়ে। মানসম্মত ও আধুনিক যন্ত্রাংশের অভাবে এমন পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। এ কারণে দীর্ঘদিন ধরে তাদের দাবি উপস্থাপন করে আসলেও প্রতিকার না পেয়ে তারা ঢাকায় আন্দোলনে নেমেছেন। এটা নিছক দুর্ঘটনা। আমাদের লাইনম্যানরা আন্দোলন সংগ্রামের পাশাপাশি ঝড় বৃষ্টির মধ্যে নিরলসভাবে মাঠে কাজ করে যাচ্ছে।