আনোয়ার সাঈদ তিতু, কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি:-
‘কী কই বাহে! হামার দুশ্চিন্তায় শেষ নেই। সার্কাস ও যাত্রাপালা বন্ধ হওয়ায় আয়-রোজগার নাই। বর্তমানে হামার সংসার চালানি কষ্ট হয়া গেছে। ভাত আছে তো তরকারি নাই। একবেলা খাই তো আরেকবেলা না খায়া থাকা নাগে’। চোখ মুছতে মুছতে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন সার্কাস ও যাত্রাপালার অভিনয়শিল্পী প্রতিবন্ধী শাহজাহান আলী (৫২)। তিনি কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ী উপজেলার সদর ইউনিয়নের সীমান্তঘেষা কুটিচন্দ্রখানা গ্রামের আকবর আলীর ছেলে। গত ঈদুল ফিতরে স্ত্রী-সন্তানকে এক টুকরো নতুন কাপড়ও দিতে পারেননি তিনি। ফের ঘনিয়ে আসছে কুরবানির ঈদ। স্ত্রীকে নতুন কাপড়চোপড় কিনে দিতে না পারলেও সে কষ্ট পাবে না। কিন্তু একমাত্র সন্তানকে এবার দেবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তবে পারবে কি না নিজেও জানেন না। ঘরে নেই জমানো টাকা-পয়সা। সংসারে আয় বলতে নিজের প্রতিবন্ধী ভাতাটুকু, এটাই এখন একমাত্র সম্বল। বাড়ির পাশে ছোট একটি মুদি দোকান দিলেও বেচা-বিক্রি একেবারে সামান্য। দিনে এই দোকান থেকে আয় হয় মাত্র ১০০-১৫০ টাকা। সামান্য আয়ে যেখানে স্ত্রী সন্তানদের মুখে ডাল-ভাত জোটে না। সেখানে এই ঈদে সন্তানের নতুন জামা কাপড় কিনে দেওয়া ও পরিবারের সদস্যদের মুখে এক টুকরো মাংস তুলে দেওয়া তার জন্য বিলাসিতা বলা যায়। প্রতিবন্ধী শাহজাহান আলা অতিকষ্টে খেয়ে না খেয়ে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন বলে জানান স্থানীয়রা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বাড়ির সাথে মেইন সড়কের পাশের ছোট একটি মুদি দোকান। বাপ-ছেলে দোকানটি পরিচালনা করছেন। ছেলে তাজুল ইসলাম স্কুল শেষ করে দোকান চালান। দোকানে দেড় দুই ঘণ্টা থাকার সময় কোনোরূপ পণ্য বিক্রি হতে দেখা যায়নি। দোকানে মালপত্র কম থাকায় বেচা-বিক্রিও কম। দীর্ঘ ১৭ বছর দেশের বিভিন্ন সার্কাস দলে ও যাত্রাপালায় অভিনয়ের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন শাহজাহান। দেশের একাধিক সার্কাস ও যাত্রাদলে অভিনয় করে জীবন জীবিকা নির্বাহ করেছেন এই সার্কাস শিল্পী। সার্কাস বন্ধ হওয়ায় তার আয় কমেছে। ফলে তিনি স্ত্রী সন্তানকে নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন। প্রতিবন্ধী শাহজাহান আলী (৪২ ইঞ্চি) লম্বা ও তার একমাত্র ছেলে তাজুল ইসলাম (৩৬ ইঞ্চি) লম্বা। শাহজাহান আলী বলেন, আমার বাবা থেকেও নেই। পাশেই বাবার বাড়ি। কিন্তু আমি প্রতিবন্ধী হওয়ায় কোনপ্রকার আমার-পরিবারের খোঁজ খবর নেয় না। আমার বয়স যখন ১২ বছর তখন থেকেই বুলবুল, রওশন, সোনার বাংলা সার্কাসসহ একাধিক যাত্রাপালায় অভিনয় করে জীবন নির্বাহ শুরু করি। জীবনে অনেক কষ্ট করেছি। কষ্টের টাকা দিয়ে সংসার চালানোর পাশাপাশি এই বাড়ির ভিটার ৮ শতক জমি কিনে স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে বাস করছি। আমার ১ ছেলে ও দুই মেয়ে। বড় মেয়ে শাহানা আক্তার ও ছোট মেয়ে সোনা বানু। প্রায় ২০ বছর ধরে পরিশ্রম করে তাদের বিয়ে দিয়েছি। সার্কাসও বন্ধ, আমার বয়সও বেড়ে গেছে। শরীরে আর শক্তি পাই না।
তার একমাত্র সন্তানের প্রতিবন্ধী ভাতাসহ পড়ালেখায় সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার জন্য সরকারের সহযোগিতা চান তিনি। এছাড়াও পরিবারের জন্য বিত্তবানদের কাছে আকুতি জানান এই শিল্পী। শাহজাহান আলীর ছেলে তাজুল ইসলাম বলেন, আমার বাবা আর কাজ করতে পারেন না। তাই বাবার হাতে এখন টাকা নেই। যদি সরকার আমার প্রতিবন্ধী ভাতা করে দিতো তাহলে আমার নতুন জামা কিনতে পারতাম। তার পড়াশুনার খরচ চালাতে বিত্তবানদের কাছে সহায়তা চান এই শিক্ষার্থী। ফুলবাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) রেহেনুমা তারান্নুম জানান, ওই পরিবারের যে কেউ সমাজসেবা অফিসে যোগাযোগ করলে শিক্ষার্থী তাজুল ইসলামের প্রতিবন্ধী ভাতার ব্যবস্থা হয়ে যাবে বলে আশা করি। এছাড়া সেই পরিবারটিকে বিভিন্ন ধরনের সরকারি সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার আশ্বাস দেন ইউএনও।