হাবিবুর রহমান, চিলমারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধিঃ
কুড়িগ্রামের চিলমারীতে দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর অবশেষে গত বছরের ২০ সেপ্টেম্বর (২০২৪) চিলমারী নৌ-বন্দরের উন্নয়নের কাজ শুরু হয়েছে। প্রায় ৩’শ কোটি টাকা ব্যয়ে, বন্দরের অবকাঠামো উন্নয়নের কাজটি করছেন, ডিজি বাংলা ও স্ট্যান্ডার্ড ইঞ্জিনিয়ারিং টিকাদারি প্রতিষ্ঠান। নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীর নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) উপ-প্রকৌশলী আবু দাউদ সরকার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। বিআইডব্লিউটিএ’র তথ্যানুযায়ী প্রায় ১০ একর জায়গায় জুড়ে নির্মিত হবে, নৌ-বন্দরের পণ্যবাহী ও যাত্রীবাহী পোর্টটি। তবে আপাতত আড়াই একর জায়গার উপর বন্দরের অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ শুরু হয়েছিল তা এখনো চলমান রয়েছে। সরেজমিন বন্দর এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সূর্যোদয়ের পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন বিরামহীন ভাবে কাজ করছেন।
বর্তমানে চলমান কাজ হচ্ছে, প্যাসেন্জার টার্মিনাল ভবনটি ছাদ ঢালাইয়ের কাজ শেষ হয়েছে এবং পরিদর্শন ভবন ও বন্দর ভবনের বাংলোর ২য় তলার ছাদ ঢালাইয়ের কাজ চলমান রয়েছে। তবে কাজ শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত প্রতিনিয়ত আসেন ভ্রমন পিপাসুরা। বন্দর এলাকার ব্যবসায়ী শামীম মিয়া, দৌল্লা মিয়া, নুর আমিন, আঃ রহিম, বিপ্লব মিয়া, আঃ রাজ্জাকসহ আরও অনেকে বলেন, বন্দরের কাজ শেষ হলে আমাদের এখানকার অনেক উন্নয়ন হবে। এখন যেমন বিক্রি হচ্ছে তখন তার ৮/১০ গুন বেশি মালামাল বিক্রি হবে। আমরা যেমন লাভবান হব তেমন ভাবেই চিলমারীর ও অনেক উন্নয়ন হবে বলে মনে করি। এ বিষয়ে চিলমারীর বিভিন্ন ব্যবসায়ী এবং সমাজ সেবকরা বলেন, বন্দরটি চালু হলে আমাদের এখানে প্রতিনিয়ত অনেক মানুষ আসবে, ফেরি দিয়ে অনেক গাড়ি পারাপার হবে, ব্যবসায়ীদের ব্যবসা অনেক জমজমাট হবে এবং অনেক বেকার লোকদের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে। এবং নদীর তীরবর্তী স্থানে যদি কোন দর্শনীয় স্থান কিংবা রিসোর্ট তৈরি করা যায়, তাহলে আর উন্নয়ন হবে বলে জানেন তারা।
এ বিষয়ে চিলমারী উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান রুকুনুজামান শাহিন বলেন, চিলমারীর নৌ-বন্দর/ নদী বন্দরের উন্নয়ন কাজ শেষ হলে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ব্যবসা বাণিজ্যের মাধ্যমে চিলমারী উপজেলার পাশাপাশি কুড়িগ্রাম জেলাও উন্নয়নের জাতীয় অর্থনীতি সমৃদ্ধ হবে বলে জানান। জানাযায়, ভারত-বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে নৌ-পথে মালামাল পরিবহনের জন্য ১৯৭২ সালে একটি নৌ-প্রটোকল চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। ব্রিটিশ আমল থেকে কলকাতা বন্দর থেকে গৌহাটি ও আসামের ধুবড়ি পর্যন্ত নৌ-যাতায়াত চালু ছিল। কালক্রমে ব্রহ্মপুত্র নদের গভীরতা কমে যাওয়া, অব্যবস্থাপনা এবং নৌ-পথের উন্নয়ন না হওয়ায় ঐতিহ্যবাহী চিলমারী নৌ-বন্দরটি অচল হয়ে পরে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৬ সালের ৭ সেপ্টেম্বর চিলমারী সফরে এসে চিলমারীকে নৌ-বন্দর হিসেবে ঘোষণা দেন। এরপর গত ২৩ সেপ্টেম্বর তৎকালীন নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান চিলমারীর রমনা ঘাট এলাকায় পল্টুন স্থাপন করে, অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিআই) এর নদীবন্দর উদ্বোধন করেন।
গত বছরের ২০ সেপ্টেম্বর চিলমারী-রৌমারী নৌ-রুটে ফেরিঘাট ও ফেরি সার্ভিস উদ্বোধন এবং চিলমারী নদীবন্দরের উন্নয়নের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন, নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। এ ব্যাপারে বিআইডব্লিউটিএ উপ-প্রকৌশলী আবু দাউদ সরকার বলেন, চিলমারী নদীবন্দর সাবেক মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার ভিত্তিক একটি বিশেষ প্রকল্প। নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী মহোদয়ের বন্দর উন্নয়নের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধনের পর থেকেই এর কাজ শুরু হয়েছে। বন্দরের অবকাঠামো উন্নয়নে প্রায় ৩’শ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। অপরদিকে ৭৩০ কোটি ৮৫ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ১৪৯০ মিটার চিলমারী হরিপুর তিতা সেতুটি, চালু হলে চিলমারীর অনেক উন্নয়নের সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানা যায়। এ ব্যাপারে স্থানীয় জাহাঙ্গীর আলম, পারভেজ মিয়া, সবুজ মিয়া ও ঘুরতে আসার কয়েক জনের সাথে কথা হলে তারা বলেন, এই ব্রিজ চালু হলে চিলমারীর সাথে হরিপুরের সংযোগ আরো জোরদার হবে। এবং চিলমারির বিভিন্ন চরে আবাদি ফসল ধান, গম, পাট, ভুট্টা, ডাল, আলু, বেগুন, বাদামসহ বিভিন্ন তরকারি জাতীয় ফসল হরিপুর হয়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় রপ্তানি করা যাবে।
তখন কৃষকেরা তাদের ফসলের ন্যায্য মূল্য পাবে, এতে করে আরো অনেক নতুন চাষী সৃষ্টি হবে। তারা আরো বলেন, ব্রিজ চালু হলে ব্রিজের দু'পাশে বাজার গড়ে উঠবে। এবং সরকারের পাশাপাশি দেশি কিংবা বিদেশি কোন এনজিও যদি এখানে কোন প্রতিষ্ঠান বা কল কারখানা তৈরি করেন, তাহলে এখানে যেমন অর্থনৈতিক অঞ্চল হিসাবে তৈরি হবে। অপরদিকে তেমনি হাজার হাজার বেকারের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে বলে জানান তারা। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার সবুজ কুমার বসাক বলেন, নৌ- বন্দর এবং ব্রিজ চালু হলে, তখন হয়তো দেশি কিংবা বিদেশি অনেক এনজিও আসতে পারে। এবং সরকারের পক্ষ হতে হয়তো কোন প্রতিষ্ঠান কিংবা বড় কোম্পানি তৈরি হতে পারে। যা চিলমারী বাসীর জন্য অর্থনৈতিক অঞ্চল হিসেবে এবং হাজার হাজার বেকার যুবকের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে বলে জানান তিনি।
প্রকাশক ও ব্যবস্থাপনা সম্পাদকঃ- মোঃ হামিদুল ইসলাম। প্রধান সম্পাদকঃ- মোঃ ইলিয়াছ হোসাইন। দৈনিক আজকের সত্য প্রকাশ © ২০২৫-২৬ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। ই-মেইলঃ news24ajkersottoprokash@gmail.com
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়ঃ কোড ব্রাইট আইটি