মাহাবুব আলম, বিশেষ প্রতিনিধি।
ভোলা জেলার চরফ্যাশনের নজরুল ইসলাম ডিগ্রি কলেজে কথিত অধ্যক্ষ এ.কে.এম শাহাবুদ্দিনের বিরুদ্ধে জালিয়াতি, অনিয়ম ও ক্ষমতার অপব্যবহারের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। কলেজের একাধিক শিক্ষক ও কর্মচারী মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে লিখিতভাবে এসব অভিযোগ উত্থাপন করেছেন।
অভিযোগকারীদের দাবি, শাহাবুদ্দিন দীর্ঘদিন ধরে কোনো বৈধ নিয়োগপত্র ছাড়াই অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন, যার ফলে কলেজের প্রশাসনিক কার্যক্রম, শিক্ষার পরিবেশ এবং সুনাম মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
লিখিত অভিযোগে বলা হয়, এ.কে.এম শাহাবুদ্দিন প্রথমবার ২০১১ সালে কলেজে অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ পান। এরপর ২০১৬ সালে তিনি ভোলা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর পারভিন আখতারের স্বাক্ষর জালিয়াতির মাধ্যমে আবারও নিয়োগ নেন। কিন্তু এমপিওভুক্তির সময় স্বাক্ষর জালিয়াতির বিষয়টি ধরা পড়লে তার আবেদন বাতিল হয়ে যায়। পরবর্তীতে ২০১৯ সালে তিনি তৃতীয়বারের মতো নিয়োগ গ্রহণ করেন, তবে তা নিয়োগ নীতিমালার পরিপন্থী হওয়ায় বাতিল হয়।
সবশেষে, ২০২২ সালের ১৩ জানুয়ারি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি স্মারক (নং INSO2-6/00068/2017/1427/52662) অনুযায়ী তিনি চতুর্থবারের মতো অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ গ্রহণ করেন। কিন্তু মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) সভায় সেই নিয়োগটিও বাতিল ঘোষণা করা হয়।
অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, এসব সময় অধ্যক্ষের পদ শূন্য থাকলে একজন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দায়িত্বে থাকার বিধান থাকলেও, শাহাবুদ্দিন নিজেই নিজেকে অধ্যক্ষ হিসেবে দাবি করে কলেজের সকল প্রশাসনিক নথিপত্রে স্বাক্ষর করেন। এমনকি শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতার কাগজপত্রেও স্বাক্ষর দিয়ে আসছিলেন, যা শিক্ষা প্রশাসনিক বিধিমালার পরিপন্থী ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে বিবেচিত।
এছাড়া অভিযোগে বলা হয়, তিনি পূর্ব ওমরাবাজ মোহাম্মদীয়া আলিম মাদ্রাসার সহকারী অধ্যাপক পদে থেকে নজরুল ইসলাম কলেজে অধ্যক্ষের দায়িত্ব নেন এবং একাধিক সময় দুই প্রতিষ্ঠানে একযোগে বেতন-ভাতা গ্রহণ করেছেন। এই অভিযোগের সাথে ব্যাংক বিবরণী, বেতন-ভাতা সংক্রান্ত রেকর্ড, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্মারকপত্রসহ একাধিক প্রমাণপত্র সংযুক্ত করা হয়েছে।
এ বিষয়ে কলেজের পদার্থবিজ্ঞানের শিক্ষক প্রফেসর আনোয়ার হোসেন বলেন, “এ.কে.এম শাহাবুদ্দিন ২০১১ সাল থেকে চারবার অধ্যক্ষ নিয়োগ নেন, যার মধ্যে প্রতিটি নিয়োগেই অনিয়ম ও জালিয়াতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। ২০১৬ সালে জাল স্বাক্ষর, ২০১৯ সালে বিধিবহির্ভূত প্রক্রিয়া, এবং সর্বশেষ ২০২২ সালের নিয়োগটিও মাউশির সভায় বাতিল হয়। এর মধ্যেও তিনি নিজেই নিজেকে অধ্যক্ষ দাবি করে কলেজের প্রশাসনিক দায়িত্ব, নথিপত্র এবং বেতন সংক্রান্ত কাগজে স্বাক্ষর করে আসছেন, যা পুরোপুরি বেআইনি। এ ধরনের অনিয়ম শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক একটি দৃষ্টান্ত।”
আরেকজন শিক্ষক, যিনি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “আমরা বারবার এই অনিয়মের বিরুদ্ধে লিখিত আপত্তি জানিয়েছি। কিন্তু কোনো উচ্চমহলের কার্যকর পদক্ষেপ না থাকায় শাহাবুদ্দিন এখনও অবৈধভাবে অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করছেন। একজন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান যদি নিজেই জালিয়াতি করেন, তাহলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে নৈতিক মূল্যবোধ গড়ে উঠবে কীভাবে?”
অভিযোগকারীদের পক্ষ থেকে আরও দাবি করা হয়, এ.কে.এম শাহাবুদ্দিন স্থানীয়ভাবে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের একজন সক্রিয় কর্মী হিসেবে পরিচিত। তিনি হাজারীগঞ্জ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। তার আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বিভিন্ন রাজনৈতিক অনুষ্ঠানের একাধিক ছবিও অভিযোগপত্রের সাথে সংযুক্ত রয়েছে। অভিযোগকারীদের মতে, এই রাজনৈতিক প্রভাব কাজে লাগিয়েই তিনি বারবার অবৈধভাবে নিয়োগ ও ক্ষমতা ব্যবহার করে যাচ্ছেন।
তবে এ বিষয়ে জানতে চাইলে এ.কে.এম শাহাবুদ্দিন বলেন, “আমার বিরুদ্ধে আনীত সকল অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। আমি কখনও আওয়ামী লীগের কোনো কার্যক্রমের সাথে সম্পৃক্ত ছিলাম না।”
অভিযোগকারীরা এই অনিয়ম ও দুর্নীতির সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।