আনোয়ার সাঈদ তিতু, কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি:-
কুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাট উপজেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোঃ মনিবুল হক বসুনীয়ার বক্তব্যের বিরুদ্ধে বিবৃতি দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য ও সরকারি আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত হন তিনি। এ ঘটনায় দেশবাসীকে বিভ্রান্ত করতে তিনি বিভিন্ন গণমাধ্যমে ৪ মাস আগের ঘটনার জেরে বরখাস্ত হয়েছেন বলে দাবি করেন। তার এই দাবি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও অসৎ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে জানিয়েছে মন্ত্রণালয়।
রোববার (১৮ মে) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এই দাবি করে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, কতিপয় জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত একটি সংবাদ মন্ত্রণালয়ের গোচরীভূত হয়েছে। ‘উপদেষ্টাকে নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট, চার মাস পর বরখাস্ত শিক্ষক’ এই শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদে বরখাস্ত সহকারী শিক্ষকের মিথ্যা ও বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্য পরিবেশিত হয়েছে। তার বক্তব্যের ফলশ্রুতিতে সৃষ্ট বিভ্রান্তি দূর করতে এবং প্রকৃত ঘটনা স্পষ্টীকরণের জন্য প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এই বিবৃতি প্রদান করছে।
এছাড়াও বিবৃতিতে প্রকৃত ঘটনা তুলে ধরে বলা হয়েছে, কুড়িগ্রাম জেলাধীন রাজারহাট উপজেলার আবুল কাশেম বালিকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মনিবুল হক বসুনিয়ার ব্যক্তিগত ফেসবুক থেকে গত ১২ মে একটি নেতিবাচক ও কুরুচিপূর্ণ পোস্ট করেন। এই পোস্টে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘণ্টা বৃদ্ধি, শনিবার বিদ্যালয় খোলা রাখা এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে শিষ্টাচার বহির্ভূত ভাষা (উচ্চারণযোগ্য নয়) ব্যবহার করে তার ব্যক্তিগত মতামত প্রকাশ করেন। ওই পোস্টে গত ১০ মে অনুষ্ঠিত ‘জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা পদক-২০২৪ প্রদান এবং জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা সপ্তাহ-২০২৫’-এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘণ্টা বৃদ্ধি সংক্রান্ত আলোচনাকে ইঙ্গিত করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০২৫ শিক্ষাবর্ষে সারা বছরে বিদ্যালয় খোলা থাকবে মাত্র ১৭৯ দিন। বিশ্বের অন্য যে কোনো দেশের তুলনায় তা অনেক কম। এতো অল্প শিখন ঘণ্টা দিয়ে কোনোভাবেই প্রাথমিক শিক্ষার গুণগত মান বাড়ানো সম্ভব নয়। মূলত এ পরিপ্রেক্ষিতেই শিক্ষকদের সাপ্তাহিক কর্মঘণ্টা ঠিক রেখে শনিবার বিদ্যালয় খোলা রাখার প্রসঙ্গটি আলোচিত হয়। এছাড়াও প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে শিখন ঘণ্টা বৃদ্ধির জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের আওতাধীন সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও পিটিআইগুলোকে ভ্যাকেশন ডিপার্টমেন্ট থেকে নন ভ্যাকেশন ডিপার্টমেন্টে পরিণত করার প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ের সক্রিয় বিবেচনাধীন।
বরখাস্ত শিক্ষক মনিবুল হক বসুনিয়া তার ফেসবুক আইডিতে শিক্ষকদের সাপ্তাহিক কর্মঘণ্টা ঠিক রেখে শনিবার বিদ্যালয় খোলা রাখার বিষয়ে মতামত প্রদান করতে গিয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সম্পর্কে শিষ্টাচার বহির্ভূত ও বিরূপ মন্তব্য পোস্ট করেন, যা সরকারি প্রতিষ্ঠানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার নির্দেশিকা ২০১৯-এর ৭(ঘ) এবং ১০(ঙ) (ছ) (পরিমার্জিত সংস্করণ)-এর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এই আলোচনাকে কেন্দ্র করে বরখাস্ত শিক্ষক মনিবুল তার ফেসবুক পোস্টে উল্লেখ করেন, ‘এই যে শিখন ঘণ্টা বাড়াতে চাচ্ছে কেডা এইডা? এইডা আবার দেকতাসি শনিবারও স্কুল খোলার কতা কইতাসে। এদের কি শিশু মনোবিজ্ঞানের ব্যাপারে ন্যূনতম ধারণা আছে? ভ্যাকেশন-নন ভ্যাকেশন অন্য ব্যাপার। জানিনা এইডা কোন পদে আছে। তবে কথা শুইন্যাতো মনে হইতাসে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তর বা মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ পদে বসে আছে। আমারে একখান কতা বুঝানতো… এইগুলারে কই থেকে ধইর্যা আইনা এই ডিপার্টমেন্টে বসায়? আর কারাই বা বসায়?’ এছাড়াও তিনি তার ওই স্ট্যাটাসে আরও বিরূপ-নেতিবাচক কথা লিখেন।
এর আগে, গত শনিবার (১৭ মে) কুড়িগ্রাম জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার স্বপন কুমার রায় চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে অভিযুক্ত শিক্ষক মনিবুল হককে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেন।