আনোয়ার সাঈদ তিতু, কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি:-
বাংলাদেশের উওরের সীমান্তঘেঁষা জেলা কুড়িগ্রাম। এ জেলার ওপর দিয়ে বয়ে চলছে ছোট-বড় ১৬টি নদ-নদী। নদীর একূল ভাঙে তো ওকূল গড়ে। ভাঙা-গড়ার খেলায় এ জেলার মানুষের ভাগ্যে নেমে আসে চরম বিপর্যয়। বর্ষা মৌসুমে বন্যা আর শুষ্ক মৌসুমে খরার ফলে দেশের অন্যতম দুর্যোগপ্রবণ দরিদ্র জেলায় পরিণত হয় কুড়িগ্রাম। ৯টি উপজেলা, তিনটি পৌরসভা ও ৪৫০ চর ও দ্বীপচর রয়েছে এই জেলায়। জেলাবাসীর ভাগ্যের উন্নয়নে ধরলা নদীর ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের মাধবরাম চরে ভুটানিজ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরির যৌথ পরিকল্পনা করে বাংলাদেশ ও ভুটান সরকার। আর প্রকল্পকে ঘিরে সেখানকার মানুষ স্বপ্ন দেখছে অর্থনৈতিক অঞ্চলের উজ্জ্বল সম্ভাবনার। কবে অর্থনৈতিক অঞ্চলের কাজ শুরু হবে সেই ক্ষণ গণনা করছে জেলার ৩০ লাখ মানুষ।
জানা যায়, কুড়িগ্রাম জেলা শহরের এক কিলোমিটারের মধ্যে রয়েছে ধরলা নদী। কুড়িগ্রামবাসীর ভাগ্যের উন্নয়নের জন্য ধরলা নদীর ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের মাধবরাম চরে ভুটানিজ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরির যৌথ পরিকল্পনা করে বাংলাদেশ ও ভুটান সরকার। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ১০ ও ১১ মার্চ ভুটানের রাজা-রানি বাংলাদেশ সফরে আসেন এবং কুড়িগ্রাম ধরলা নদীর মাধবরাম চর পরিদর্শন করেন। এরই মধ্যে মাধবরাম মৌজার ১৩৩ দশমিক ৯২ একর খাস জমি অর্থনৈতিক অঞ্চল কতৃপক্ষের (বেজা) কাছে হস্তান্তর করেছে কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসন। এখানে আরও ব্যক্তিমালিকানাধীন ৮০ একর জমি অধিগ্রহণের পরিকল্পনা করেছে কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক। কিন্তু ভুটানের রাজা-রানীর বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের জায়গা পরিদর্শনের পর দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হলেও বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য নির্ধারিত জায়গায়টি মুখ থুবড়ে পড়ে আছে। অর্থনৈতিক অঞ্চলের কার্যক্রম কবে শুরু করা হবে, সেই ক্ষণ গুনছে জেলার ৩০ লাখ মানুষ।
ধরলাপাড়ের আলুচাষি ও ব্যবসায়ী আসাদুজ্জামান বাবু বলেন, বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল চালু হলে ব্যবসার প্রসার ঘটবে এবং প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অনেক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। কুড়িগ্রাম মাদরাসা শিক্ষক-কর্মচারী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাওলানা আব্দুল ওয়াহেদ বলেন, আমরা অর্থনৈতিকভাবে অসচ্ছল হওয়ায় অন্য জেলার তুলনায় অনেক পিছিয়ে আছি। বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল চালু হলে আমরা আর্থিকভাবে সচ্ছল হব এবং শিক্ষার ক্ষেত্রে অনেক এগিয়ে যাব। কৃষক ও শিক্ষক জিয়াউল ইসলাম বলেন, আমরা চাই দ্রুত ভুটানিজ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল চালু হোক। এতে আমরা জেলাবাসী কৃষিক্ষেত্রে অধিক লাভবান হব। কুড়িগ্রাম আলিয়া মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা নুর বখত বলেন, এখানে অর্থনৈতিক অঞ্চল চালু হলে অনেক বেকার সমস্যার সমাধান হবে এবং পথঘাটের উন্নয়ন ঘটবে।
ইসলামি শাসনতন্ত্র আন্দোলনের কুড়িগ্রাম জেলা সভাপতি আলহাজ শাজাহান আলী বলেন, আমরা দেশের অন্য জেলার চেয়ে অনেক পিছিয়ে আছি। জেলাবাসীর উন্নয়নের জন্য জরুরি ভিক্তিতে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলটি চালু করা দরকার। কুড়িগ্রাম জেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আলহাজ গোলাম মোস্তফা বলেন, এই জেলায় তেমন কোনো কলকারখানা নেই। প্রতিবছর অনেক মানুষ শ্রমিকের কাজ করতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যায়। ধরলার পাড়ে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল চালু হলে কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি সবার মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পাবে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কুড়িগ্রাম জেলা আহ্বায়ক আব্দুল আজিজ নাহিদ বলেন, জেলার উন্নয়ন হলে দেশের উন্নয়ন হবে। আমাদের জেলায় কোনো কর্মক্ষেত্র নেই। একটি টেক্সটাইল মিল দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর আমরা তা চালু করার ব্যবস্থা নিয়েও তেমন ভালো ফল পাইনি। আমরা এই এলাকার মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে দ্রুত অর্থনৈতিক অঞ্চলের বাস্তবায়ন চাই।
জাতীয় নাগরিক পার্টির জেলা সমন্বয়ক মুকুল মিয়া বলেন, আমরা নতুন বাংলাদেশের সকল উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে একাত্মতা ঘোষণা করি। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব অর্থনৈতিক অঞ্চলের বাস্তবায়ন চাই। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কুড়িগ্রাম জেলা আমির আব্দুল মতিন ফারুকী বলেন, ভুটানিজ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের জায়গা হস্তান্তর করা হয়েছে অনেক আগেই। এখন এর বাস্তবায়ন জরুরি। অর্থনৈতিক অঞ্চল চালু হলে জেলায় অনেক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।
কুড়িগ্রাম জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আলহাজ সোহেল হোসেন কায়কোবাদ বলেন, আমরা জেলাবাসীর উন্নয়নের স্বার্থে ভুটানিজ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের দ্রুত বাস্তবায়ন চাই। এখানে অর্থনৈতিক অঞ্চল চালু হলে জেলা তথা দেশ উপকৃত হবে। সেই সঙ্গে স্থলবন্দর ও নৌবন্দর দুটিও ভালো চলবে। কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাঈদা পারভীন বলেন, খাস জমি হস্তান্তর হয়েছে। এছাড়া মালিকানা জমি একোয়ার করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। কুড়িগ্রামের উন্নয়নের স্বার্থে দ্রুত এর বাস্তবায়ন হওয়া দরকার।
কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক নুসরাত সুলতানা বলেন, আমরা বেজার কাছে জমি হস্তান্তর করেছি, পরবর্তী নিদের্শনার অপেক্ষায় আছি। ধরলা নদীর মাধবরাম চরে ভুটানিজ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল চালু হলে আমরা সবাই উপকৃত হব।