আনোয়ার সাঈদ তিতু, কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি:-
কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর উপজেলা বিএনপি ও পৌর বিএনপির সদ্য ঘোষিত আহ্বায়ক কমিটি থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন দলটির চার নেতা। কমিটি ঘোষণায় দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনা অনুসরণ না করা, আওয়ামী লীগ সরকারের নির্যাতন সহ্য করে আন্দোলনে থাকা ত্যাগী নেতাকর্মীদের বঞ্চিত করাসহ অর্থের বিনিময়ে নিষ্ক্রিয়দের নিয়ে কমিটি করার অভিযোগ তুলে তারা পদত্যাগের ঘোষণা দেন। শুক্রবার (১৬ মে) দুপুরে কুড়িগ্রামের উলিপুর শহরে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এই ঘোষণা দেন পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নেওয়া উপজেলা ও পৌর বিএনপির চার নেতা। এর আগে ১৪ মে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মোস্তাফিজার রহমান মোস্তাফা ও সদস্য সচিব সোহেল হোসনাইন কায়কোবাদ স্বাক্ষরিত উলিপুর উপজেলা ও পৌর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নেওয়া নেতাকর্মীরা হলেন উপজেলা বিএনপির সদ্য ঘোষিত আহ্বায়ক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ও উপজেলার ধরনীবাড়ি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম ফুলু, পৌর বিএনপির ১নং যুগ্ম আহ্বায়ক দেওয়ান নুরেচ্ছেবাহ স্টার, ৯নং যুগ্ম আহ্বায়ক মতলেবুর রহমান ও সদস্য আমিনুল ইসলাম। তবে সংবাদ সম্মেলনে দেওয়ান নুরেচ্ছেবাহ স্টার উপস্থিত ছিলেন না। তবে তিনি পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে এই প্রতিবেদককে নিশ্চিত করেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে পদত্যাগের কারণ উল্লেখ করে বিএনপি নেতারা বলেন, ‘সদ্য ঘোষিত কমিটিতে উলিপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র তারিক আবু-আলা চৌধুরীকে আহ্বায়ক করা হয়েছে। তিনি দলীয় ম্যান্ডেট নিয়ে নির্বাচিত হওয়ার পর দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত হয়ে তিনি আওয়ামী লীগকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। বিগত আওয়ামী লীগ আমলে বিএনপির হয়ে তার কোনও দলীয় কর্মকাণ্ডের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যাবে না। বরং বিএনপির কর্মসূচি ভণ্ডুল করার জন্য তিনি আওয়ামী লীগকে উৎসাহ দিয়েছেন, সহায়তা করেছেন। টাকার বিনিময়ে কমিটিতে বিএনপির বিরোধীদের স্থান দেওয়ার অভিযোগ তুলে সংবাদ সম্মেলনে উপজেলা বিএনপির পদত্যাগী যুগ্ম আহ্বায়ক আমিনুল ইসলাম ফুলু বলেন, ‘কমিটি তৈরিতে তারেক রহমানের নির্দেশনা অমান্য করা হয়েছে। কমিটিতে আওয়ামী সুবিধাভোগী ও জাতীয় পার্টির নেতাদের পুনর্বাসন করা হয়েছে। লাঙ্গল প্রতীকে ইউপি উপনির্বাচন করা সহিদুর রহমানকে কমিটিতে ১৮নং সদস্য করা হয়েছে। যারা আওয়ামী লীগ আমলে পুলিশি হয়রানি সহ্য করে আন্দোলন সংগ্রাম করেছিল, যারা বাড়িতে থাকতে পারেনি, তাদের উপেক্ষা করা হয়েছে। ত্যাগীদের বঞ্চিত করে হাইব্রিডদের স্থান দিয়ে কমিটি করা হয়েছে। আমরা এই কমিটি প্রত্যাখ্যান করছি। মাঠের বাস্তবতা আমলে নিয়ে অবিলস্বে নতুন করে কমিটি ঘোষণার দাবি জানাচ্ছি। নিষ্ক্রিয় ও আওয়ামী লীগের নির্বাচনি প্রচারণায় অংশ নেওয়াদের পুনর্বাসন, আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির লোকদের পদায়ন এবং বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্রজনতার ওপর হামলার অভিযুক্ত মামলার আসামিকে কমিটিতে স্থান দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ তোলেন পদত্যাগের ঘোষণা দেওয়া নেতাকর্মীরা। এ সময় প্রমাণ হিসেবে তারা কিছু স্থিরচিত্র প্রদর্শন করেন।
আওয়ামী লীগ আমলে নিজেদের নির্যাতিত হওয়ার বর্ণনা দিয়ে পদত্যাগের ঘোষণা দেওয়া পৌর বিএনপির ৯নং যুগ্ম আহ্বায়ক মতলেবুর রহমান বলেন, ‘আওয়ামী লীগ আমলে মৃত্যুর উপত্যকায় দাঁড়িয়ে মুক্তির আন্দোলন করেছিলাম। এখন আমরা হাইব্রিডদের ভিড়ে কোণঠাসা হয়েছি। অনেক ত্যাগী নেতাকর্মীদের বঞ্চিত করা হয়েছে। মাঠ জরিপ করে কমিটি করা হলে ত্যাগীরা বঞ্চিত হতো না। আমরা চাই অবিলম্বে এই কমিটি বাতিল করে বিএনপির জন্য নিবেদিত প্রকৃত কর্মীদের কমিটিতে স্থান দেওয়া হোক। এ জন্য আমরা তারেক রহমানসহ বিএনপি মহাসচিবের হস্তক্ষেপ কামনা করছি। তবে পদত্যাগীদের এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব সোহেল হোসনাইন কায়কোবাদ। তিনি বলেন, ‘যাদের নিয়ে কমিটি করা হয়েছে তারা সবাই পরীক্ষিত। উলিপুর উপজেলা কমিটিতে যাকে আহ্বায়ক করা হয়েছে তিনি জেলা কমিটির সাবেক সহ-সভাপতি ছিলেন। আমাদের সঙ্গেই তিনি বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছিলেন। সেখানে বিএনপির দুটি গ্রুপ বিদ্যমান। আমরা সবাইকে নিয়ে একটি প্ল্যাটফর্মে রাজনীতি করতে চাচ্ছি। দুটি গ্রুপের মধ্যে সমন্বয় করে কমিটি দেওয়া হয়েছে। সবাইকে আহ্বায়ক কমিটিতে স্থান দেওয়া সম্ভব নয়। যারা নেতৃত্বে আসতে চান তারা কাউন্সিলের মাধ্যমে সেই সুযোগ পাবেন। এরপরও যারা নানা অভিযোগ তুলে পদত্যাগের ঘোষণা দিচ্ছেন তারা বিএনপির ভাবমূর্তি নষ্ট করতে চাচ্ছেন।’