আনোয়ার সাঈদ তিতু, কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি:-
কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারী উপজেলায় বাঁশের তৈরী সামগ্রীর চাহিদা কমে যাওয়ায় কারিগরদের সংসারে দূর্দিন দেখা দিয়েছে। উপজেলার রমনা ইউনিয়নের জোড়গাছ ও রাণীগঞ্জ ইউনিয়নের ফকিরেরহাট এলাকায় যুগ যুগ ধরে বাঁশ শিল্পের কাজ করে আসছে। আগে একসময় বাঁশ শিল্পের ব্যাপক চাহিদা ছিল এবং তাদরে ব্যবসা ছিল রমরমা। কালের বির্বতনে বাঁশ শিল্পের চাহিদা কমে যাওয়ায় এই শিল্প প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে। একসময় পরিবারের নানা কাজের পাশাপামি গৃহস্থলির কাজেও বাঁশের তৈরী জিনিসপত্রের ব্যবহার ছিলো প্রতিটি ঘরেঘরে। বিশেষ করে ফসল মাড়াইয়ে বাঁশের তৈরী কুলা, ডালি, ঝাটা, চাঙ্গারি ব্যবহার ছিল বেশী। এছাড়া গরুর মুখোশ হাঁস-মরুগির খাঁচা, ঝুড়ি, মাছ রাখার খলাই সহ সাংসারিক নানা কাজে বাঁশের তৈরী সামগ্রীর কদরও ছিল। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চিলমারী জোড়গাছ ও ফকিরের হাট এলাকার পল্লীতে বাঁশের তৈরী এসব সামগ্রী। পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও এ কাজ করতেন। স্থানীয় হাটে বাজার ছাড়াও ফেরি করে বাড়ি বাড়ি বিক্রি করা হতো এসব সামগ্রী।
কিন্তু সময়ের ব্যবধানে প্লাস্টিকের তৈরী সহজলভ্য রকমারি সামগ্রী সেই স্থান দখলে নেওয়ায় ব্যবহার কমছে বাঁশের তৈরী সামগ্রীর। পুর্ব পরুষদের এ পেশা ছাড়তে পারছেন না অনেকেই । প্রতিদিন প্রায় ৮০ থেকে ৯০ পরিবারের পুরুষ ও নারী সদস্যরা সকাল বিকেল বাঁশ থেকে তৈরি করছেন বিভিন্ন সামগ্রী। এবং বাঁশের তৈরী সামগ্রীর দাম না বাড়লেও বাঁশের দাম ঠিকই বেড়েছে। আগে প্রতিটি বাঁশের দাম ছিল ১০০ থেকে ১২০ টাকা বর্তমানে তা বেড়ে হয়েছে ২২৫ টাকা থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত। ফলে এ কাজ করে এখন আর তাদের পারিশ্রমিক ওঠে না। এতে দিনে ২৫০ টাকা থেকে ৩০০ টাকার বেশি আয় হয় না। লাভ বেশী না হওয়ায় এ ব্যবসায় অনেকেই আগ্রহ হারাচ্ছেন। লাভের আশায় অনেকেই অন্য পেশায় ঝুঁকছেন। তবে সরকারি পৃষ্টপোষকতা পেলে এ পেশা থেকেও লাভ করা সম্ভব এমন দাবী কারিগরদের। ফকিরের হাট এলাকার আমজাদ জানান, একটা বাঁশ গ্রাম থেকে সংগ্রহ করতে তাদের একবেলা চলে যায়, বাঁশের দামও বেশি। আগে একটা বাঁশ ১২০ টাকায় পাওয়া যেত এখন সেই বাঁশ ২৫০ থেকে ৩০০ টাকায় কিনতে হয়। একটা বাঁশ থেকে ২-৩ টা বাঁশের চাটাই, ডালা, চাঙ্গারি তৈরী করতে নারী-পুরুষ উভয়কে পরিশ্রম করতে হয়। যা বিক্রি করা হয় সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা থেকে ৫৫০ টাকায় তা দিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়। তারপরেও বাপ দাদাদের পেশা ধরে আছি। জোড়গাছ এলাকার নারী বাঁশ শ্রমিক জামিলা জানান, লাভ কম হওয়ায় আমাদের ছেলে মেয়েরা এ কাজ করতে চায় না তারা অন্য পেশা বেছে নিয়েছে। কিন্তু আমিতো অন্য কাজ করতে পারি না। তাই বাঁশের তৈরী জিনিস পত্র তৈরী করেই জীবন পার করছি।
চিলমারী উপজেলার নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সবুজ কুমার বসাক জানান, কুটির শিল্প প্রসারের কেউ ঋণের আবেদন করলে সহজ শর্তে ঋণ প্রদানের ব্যবস্থা করা হবে। এবং সরকার গৃহীত সকল সুবিধা তাদের দেওয়া হবে।