আবদুল মালেক হিরন, স্টাফ রিপোর্টার।
কুমিল্লার লাকসামের ইক্বরা মাদ্রাসা ছাত্রী সামিয়ার মৃত্যুকে হত্যাকান্ড দাবি করে বিচার চেয়ে এবং উক্ত ঘটনা অনুসন্ধানরত স্থানীয় সংবাদকর্মীদেরকে অকথ্য ভাষায় কটুক্তিকারির গ্রেফতার চেয়ে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে সামিয়ার, পরিবার, সহপাঠী, সুশীল সমাজ ও সাংবাদিক সংগঠনগুলো। বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) সকাল দশটায় আলোচিত ইক্বরা মাদ্রাসার সামনে শুরু হওয়া মানববন্ধন শেষে লাকসাম বাজারে একটি বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে লাকসাম প্রেসক্লাব, লাকসাম সাংবাদিক ইউনিয়ন, লালমাই প্রেসক্লাব, লাকসাম বৈষম্য বিরোধি ছাত্র আন্দোলন, ছাত্র জনতা, সামিয়ার পরিবার ও সহপাঠীরা। গত ১৭ এপ্রিল (বৃহস্পতিবার) কুমিল্লার লাকসাম পৌরসভার ইকরা মাদ্রাসার পাঁচতলা ভবনের জানালার ফাঁক দিয়ে পড়ে সামিয়া নামক এক শিক্ষার্থীর (১৩) মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করে লাকসামের ইক্বরা মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ। আজকের কর্মসূচীতে সামিয়ার মা, দাদা ও মামা সে দাবি প্রত্যাক্ষান করে এটি পরিকল্পিত হত্যাকান্ড বলে এর সুষ্ঠু বিচার চেয়ে বক্তব্য প্রদান করে।
ঘটনা অনুসন্ধানরত সাংবাদিকদের উপর চড়াও হয় মাদ্রাসা প্রধান জামাল উদ্দিন এবং মাদ্রাসার পরিচালক আজিজুল ইসলাম এর জামাতা মইনুল ইসলাম জাফরি সাংবাদিক, সুশিল সমাজ ও কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অকথ্য ভাষায় কটুক্তি করে ফেসবুকে পোস্ট করে, এর প্রতিবাদে বক্তব্য প্রদান করে লাকসাম প্রেসক্লাবের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি কালের কন্ঠ প্রতিনিধি মুজিবুর রহমান দুলাল, আহবায়ক মনির আহমেদ যুগ্ম আহবায়ক যায়যায়দিন প্রতিনিধি আরিফুর রহমান স্বপন, সদস্য সচিব বাংলাদেশ প্রতিদিন প্রতিনিধি ফারুক আল সারাহ, সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সংবাদ টুডে সম্পাদক আব্দুর রহিম, সাংগঠনিক সম্পাদক ডেইলি প্রেজেন্ট টাইম প্রতিনিধি সেলিম চৌধুরী হিরা, সহ সাধারণ সম্পাদক দৈনিক আমার সংবাদ প্রতিনিধি আমজাদ হোসেন, লালমাই প্রেসক্লাব সাংগঠনিক সম্পাদক কুমিল্লার কাগজ প্রতিনিধি প্রদীপ মজুমদার, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন প্রতিনিধি প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কারণে এ ঘটনা ঘটেছে। জানালার একটি ফাঁক দিয়ে যদি মেয়েটি নিচে পড়ে থাকে তবে গ্রীলটি মেরামত করা হয়নি কেন? আর ৫ তলা থেকে একটি ১২ বছরের মেয়ে পড়লে তার হাড়গোড় ভেঙ্গে রক্তপাত হওয়ার কথা। ঘটনা তদন্ত বিশেষ তদন্ত টিম গঠন করার দাবি করেন বক্তারা। পাশাপাশি অনুসন্ধানরত সংবাদকর্মীদের কটুক্তিকারি মইনুল ইসলাম জাফরিকে ২৪ ঘন্টার মধ্যে গ্রেফতারের আলটিমেটাম দেয়া হয়। অন্যথায় কঠোর কর্মসূচীর হুশিয়ারি দেয় বক্তারা। উল্লেখ্য গত ১৮ এপ্রিল শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়। বিষয়টি রাতেই জানাজানি হয়। এর আগে গত ১৭ এপ্রিল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে মাদ্রাসার পাঁচতলার একটি জানালার ফাঁক দিয়ে পড়ে গুরুতর আহত হয় বলে দাবি করে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ। যার কোন চাক্ষুষ সাক্ষী ও সিসিটিভি ফুটেজ সরবরাহ করতে পারেনি মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ। বরং সিসিটিভি ফুটেজ নিয়ে অনুসন্ধানরত সংবাদকর্মীদের সাথে লুকোচুরি করতে দেখা গেছে।
এই বিষয়ে মাদ্রাসার মুহতামিমের সাথে এই প্রতিবেদকের কথা হয়। তিনি বলেন, ঈদের ছুটির পর সপ্তাহখানেক আগে ওই শিক্ষার্থীর নিয়মিত ক্লাস শুরু হয়। তবে মাদ্রাসার আবাসিকে থাকতে সে অনাগ্রহী ছিল। বৃহস্পতিবার রাতে সে তার মাকে ফোন করে বাড়ি যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করে। পরে রাতে মাদ্রাসার একটি জানালার ফাঁক দিয়ে নিচে লাফিয়ে পড়ে। এদিকে নিহত সামিয়ার পরিবারের দাবি, আমরা সামিয়াকে মাদ্রাসা থেকে বাড়িতে আনতে গেলে মাদ্রাসার মুহতামিম জামাল উদ্দিন আমাদেরকে উচ্চস্বরে গালিগালাজ ও হেরেস্তা করে, এবং মাদ্রাসার যে দারোয়ান সে আমাদেরকে ধাক্কা দিয়ে বের করে দেয়। পরে দুজন মহিলা শিক্ষক সামিয়া কে জোরপূর্বক উপরে নিয়ে যায়, এ সময় সামিয়া জোরে চিৎকার করতে দেখা যায়, কিন্তু তারপরেও তাকে ছুটি দেওয়া হয়নি। সামিয়ার চাচা সাইদুল হাসান জানান মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন কথা বলে শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা করছে। পাঁচ তলা থেকে একটি মেয়ে রাস্তায় পড়লে তার হাড়-গুড় ভেঙ্গে জায়গায় মৃত্যু হওয়ার কথা, কিন্তু সেখানে আমি তার শরীর থেকে একটু রক্ত পর্যন্ত বের হতে দেখিনি। তিনি আরো জানান সামিয়া মৃত্যুর আগে বলতে শোনা গেছে বোরকা পরহীত কোন ব্যক্তি পেছন থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছে।
স্থানীয় লোকজন বলেন, গুরুতর আহত অবস্থায় মেয়েটিকে উদ্ধার করে তাঁরা কুমিল্লার একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখান থেকে চিকিৎসকের পরামর্শে ঢাকায় পাঠানো হয়। রাজধানীর পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি করতে না পেরে ধানমন্ডির একটি বেসরকারি হাসপাতালে মেয়েটিকে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। মাদ্রাসার মুহতামিম বলেন, ‘দিবাগত রাত তিনটার দিকে স্থানীয় এক ব্যক্তি রাস্তায় মেয়েটিকে পড়ে থাকতে দেখে আমাকে ফোন করেন। পরে আমরা তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাই। জানালার ওই অংশে ফাঁক ছিল, তবে সেটি আগে তেমনভাবে আমাদের নজরে আসেনি। এ বিষয়ে লাকসাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজনীন সুলতানা বলেন, পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। জানালার একটি অংশে রডের ফাঁক আছে, সেটি বেশ বড়। ধারণা করা হচ্ছে, সেখান দিয়েই মেয়েটি পড়েছে। তবে তদন্ত চলছে। মেয়েটির লাশের ময়নাতদন্ত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে হবে। যৌন নিপীড়নের কোনো অভিযোগ থাকলে, সেটিও পরীক্ষা করা হবে। সামিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে দাফনের পরের দিন মামলা করতে গেলে থানার সেকেন্ড অফিসার আমাদের মামলা নেয়নি। এখন পর্যন্ত পরিবারের পক্ষ থেকে একটি ইউডি মামলা রুজু করেন।
এর জেরে আজ হত্যা না দূর্ঘটনা তা তদন্ত করে দোষীদের শাস্তি চেয়ে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে সর্বস্তরের শ্রেণি-পেশার মানুষ।
প্রকাশক ও ব্যবস্থাপনা সম্পাদকঃ- মোঃ হামিদুল ইসলাম। প্রধান সম্পাদকঃ- মোঃ ইলিয়াছ হোসাইন। দৈনিক আজকের সত্য প্রকাশ © ২০২৫-২৬ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। ই-মেইলঃ news24ajkersottoprokash@gmail.com
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়ঃ কোড ব্রাইট আইটি