
আনোয়ার সাঈদ তিতু, কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি।
প্রতিবছর ব্রহ্মপুত্র নদের ভয়াবহ ভাঙনে বিলীন হচ্ছে বসতভিটা, ফসলি জমি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও জীবনের স্বপ্ন। নদী তীরবর্তী মানুষ প্রতিনিয়ত হারাচ্ছেন তাদের জীবিকা ও নিরাপত্তা। অথচ বছরজুড়ে সরকারি প্রকল্প কিংবা স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের কার্যকর উদ্যোগের দেখা মেলে না। ফলে হতাশা, আতঙ্ক আর অনিশ্চয়তা তাদের নিত্যসঙ্গী।
তবে এবার কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারী উপজেলার নয়ারহাট ইউনিয়নের খেরুয়ার চরের বাসিন্দারা গড়েছেন এক ব্যতিক্রম দৃষ্টান্ত। সরকারি সহায়তার অপেক্ষা না করে নিজেদের টাকায় ও শ্রমে তারা ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে গড়ে তুলছেন একটি ‘প্রাকৃতিক বাঁধ’। তাদের বিশ্বাস-এই উদ্যোগ অন্তত কিছুটা হলেও নদীভাঙন ঠেকাতে কার্যকর ভূমিকা রাখবে।
মঙ্গলবার সকাল থেকে দিনব্যাপী স্থানীয় শতাধিক মানুষ একযোগে কাজ করেন খেরুয়ার চরের প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে। কলাগাছ, কাশফুল ও কলমি গাছের চারা রোপণ করে গড়ে তোলা হয় প্রাকৃতিক বাঁধের প্রাথমিক স্তর। স্থানীয়দের ধারণা, এসব গাছের বিস্তৃত শিকড় মাটিকে আঁকড়ে ধরে নদীর তীর শক্ত করবে, যা সময়ের সঙ্গে ভাঙন প্রতিরোধে প্রাকৃতিক এক বাঁধ হিসেবে কাজ করবে।
নয়ারহাট ইউনিয়ন পরিষদের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর ব্রহ্মপুত্র নদের তীব্র ভাঙনে বজরা দিয়ারখাতা, দক্ষিণ খাউরিয়ার চর ও ফেইচকা এলাকার অন্তত ১০০ পরিবার সর্বস্ব হারিয়েছে। নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে ফসলি জমি, ঘরবাড়ি ও গাছপালা। এখন ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে আশ্রয়ন প্রকল্প, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ অসংখ্য স্থাপনা।
খেরুয়ার চরের বাসিন্দা দুলাল জোয়াদ্দার, আনোয়ার হোসেন, আব্দুল করিম ও নুর হোসেন বলেন, ‘প্রতিবছর ভাঙনে নিঃস্ব হয়ে যাই। বাড়ি হারিয়ে অন্যের জমিতে আশ্রয় নিতে হয়। তাই এবার অপেক্ষা না করে নিজেরাই উদ্যোগ নিয়েছি। গাছ লাগালে অন্তত কিছুটা ভাঙন রোধ হবে-এই বিশ্বাস থেকেই আমরা গাছ লাগাচ্ছি।’
স্থানীয় ইউপি সদস্য সানোয়ার হোসেন জানান,‘ভাঙনের ঝুঁকি কমাতে এর আগেও এলাকাবাসী এমন উদ্যোগ নেয়। তবে এবার অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা বেশি এবং কাজটি অনেকটা সংগঠিতভাবে হয়েছে। আশা করছি এর সুফল পাওয়া যাবে।’
এই মানবিক ও পরিবেশবান্ধব উদ্যোগে সহযোগিতা করেছেন কুড়িগ্রাম জেলা গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি ও জেলা জজ কোর্টের সহকারী পিপি অ্যাডভোকেট মোঃ সাজ্জাদ হোসেন পলাশ। তিনি বলেন, ‘এটি স্থানীয়দের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল। তাদের অনুরোধে যতটা পেরেছি সহযোগিতা করেছি। মানুষ যদি নিজের সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ নেয়, তবে পরিবর্তন আসবেই। এই প্রকল্প সফল হলে ভবিষ্যতে আরও এলাকাজুড়ে এমন প্রাকৃতিক বাঁধ তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে।’
চিলমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সবুজ কুমার বসাক বলেন,‘এটি একটি ইতিবাচক ও সচেতন নাগরিক উদ্যোগ। সরকারি পর্যায়েও আমরা বিভিন্ন এলাকায় গাছ লাগানোর কাজ করছি। ব্যক্তি ও বেসরকারি পর্যায় থেকেও এমন উদ্যোগকে উৎসাহিত করা হচ্ছে।’

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী-৩ মোঃ আব্দুল কাদের বলেন,‘ব্রহ্মপুত্র নদের গভীরতা হিসেবে এ ধরণের উদ্যোগ তেমন কোনো কাজে আসবে না। কেননা একটি গাছের শিকর ২/৩ বছরে সর্বোচ্চ ১ থেকে ২ ফুট হবে। ব্রহ্মপুত্র নদের ভিতরে দ্বীপচর হওয়ায় ভাঙন রোধে আপাতত সেখানে কোন প্রকল্প হাতে নেই।’

আনোয়ার সাঈদ তিতু, কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি। 



















