
আনোয়ার সাঈদ তিতু, কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি:-
কুড়িগ্রাম জেলায় নদীর ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, ধরলা, দুধকুমারসহ ১৬টি নদ-নদীতে ৩৩টি পয়েন্টে ভাঙ্গন চলছে। ভাঙ্গনে মানুষ দিশেহারা, সহায়-সম্বল হারিয়ে কষ্টে দিনযাপন করছে। ভাঙনে বাবা-মায়ের কবরও নদীতে চলে গেছে। বাঁচার তাগিদে অনেকে দিনমজুরি, রিকশা চালিয়ে জীবনধারণ করতে কষ্ট পাচ্ছেন। ধনী ব্যক্তি যারা ছিলেন, তারা ও সহায়-সম্বল হারিয়ে লজ্জার কারণে দূরদূরান্তে রিকশা চালিয়ে জীবন কাটাচ্ছেন।
কুড়িগ্রাম জেলা সদরের হলোখানা ইউনিয়নের ছাঁট কালুয়া এলাকার বাসিন্দা মজিবর (৬২), সালেহা খাতুন (৫৫), সোনাউল্লা (৬২) সাত থেকে আটবার নদী ভাঙ্গনের শিকার হয়ে বর্তমানে রাস্তার ভিখারীর মতো হাত পাতিয়ে জীবনযাপন করছেন। শুধু হলোখানা নয়, সারোডোব, ফুলবাড়ির গোরকমন্ডপ, পশ্চিম ধনিরাম, সদরের যাত্রাপুর ইউনিয়নের বানিয়েপাড়া, ঘোগাদহ ইউনিয়নের খারুয়ারপাড়, রৌমারী উপজেলা শৌলমারী ইউনিয়নের সুখের বাতি, উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের মোল্লারহাটসহ অনেক এলাকায় নদী ভাঙ্গনে মানুষ নিঃস্ব হচ্ছে। তাদের এই দুঃখ-দুর্দশা তুলে ধরতে কুড়িগ্রাম জেলা উন্নয়ন ও বাস্তবায়ন পরিষদ মানববন্ধন সমাবেশ করছে। কুড়িগ্রামে জেলা উন্নয়ন ও বাস্তবায়ন পরিষদের উদ্যোগে রোববার সকালে কুড়িগ্রাম জেলা সদরের হলোখানা ইউনিয়নের নদী ভাঙ্গনের শিকার ছাঁট কালুয়া এলাকায় হাজার হাজার নারী-পুরুষ মানববন্ধন ও সমাবেশ করেন।
সংগঠনের সভাপতি অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম বেবু’র সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন- সংগঠনের উপদেষ্টা, কুড়িগ্রাম-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ওমর ফারুখ, কুড়িগ্রাম পৌরসভার সাবেক মেয়র আবু বকর সিদ্দিক, সংগঠনের সহ-সভাপতি, স্বাস্থ্য বিভাগের সাবেক পরিচালক ডাক্তার শাহাদত হোসেন, সহ-সভাপতি জহরুল আলম, সংগঠনের যুগ্ম সম্পাদক ওমর মজিদ, ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ওহাব মন্ডল, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আরিফুল ইসলাম আরিফ, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডাক্তার রকিবুল হাসান বাঁধন, যুব সম্পাদক সাজেদুল ইসলাম হ্যাভেন, সদস্য ইমরুল হাসান সাজন, ছাত্র নেতা হামিদুল ইসলাম প্রমুখ। এ সময় সংগঠনের সভাপতি অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম বেবু বলেন, কুড়িগ্রামের ১৬টি নদ-নদীর ভাঙ্গন দীর্ঘদিন থেকে চলছে। বিশেষ করে ১৯৫৪ সাল থেকে নদীর ভাঙ্গন ব্যাপক হারে ঘটছে। এই ভাঙ্গন এখনও অব্যাহত রয়েছে। ভাঙনে কুড়িগ্রামে অসংখ্য চরের সৃষ্টি হয়েছে। বিভিন্ন তথ্য-উপাত্তে জানা গেছে, জেলায় ৪৬৯টি চরের মধ্যে ২৬৯ চরে মানুষের বসবাস। চরের মানুষের জীবনমান উন্নয়ন না হওয়া, শিক্ষা, স্বাস্থ্য-চিকিৎসাসহ নানা সমস্যার কারণে কুড়িগ্রাম জেলা দারিদ্র্যের দিক থেকে ৬৪ জেলায় সর্বনিম্ন অবস্থানে রয়েছে। বাল্যবিবাহের কারণে প্রতিবন্ধীর সংখ্যা ৯১,৬৭২ জন।
তিনি আরও বলেন, নদী ভাঙা মানুষের কোন পরিসংখ্যান কোনো দপ্তরে নেই। এছাড়া নদী ভাঙা মানুষকে আশ্রয়ের জন্য এক শতাংশ জমি ও ঘর প্রদান করার নজির নেই। নদী ভাঙা মানুষের খবর রাখে কেউ না। নদী ভাঙ্গনে সামাজিক বন্ধনও নষ্ট হচ্ছে। এ থেকে পরিত্রাণের উপায় হিসেবে পার্বত্য বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মতো চর বিষয়ক মন্ত্রণালয় গঠন করে কুড়িগ্রামের দারিদ্র্য বিমোচনের দাবি জানান।

আনোয়ার সাঈদ তিতু, কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি:- 



















